Benefit of Rudrabhishek
রুদ্রাভিষেক এর উপকারিতা : আপনি কি জানেন ভগবান শিবকে খুশি করার সহজ এবং কার্যকর উপায় কি? হ্যাঁ, এটাই রুদ্রাভিষেক। প্রাচীনকাল থেকেই রুদ্রাভিষেককে শিবের উপাসনার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এমনকি ভগবান রাম রাবণের বিরুদ্ধে জয়লাভের জন্য রামেশ্বরমে রুদ্রাভিষেক করেছিলেন। সর্বোপরি, এই রুদ্রাভিষেকটিতে এমন কী রয়েছে যা এটিকে এত বিশেষ করে তোলে? রুদ্রাভিষেক মানে ভগবান শিবের রুদ্র রূপকে অভিষেক করা। শিব পুরাণ অনুসারে, রুদ্র অবতারকে “ধ্বংসকারী” বলা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে ভোলেনাথের এই রূপও ভক্তদের উপর অশেষ আশীর্বাদ বর্ষণ করে। যখন আমরা পূর্ণ ভক্তি ও ভক্তি সহকারে রুদ্রাভিষেক করি, তখন ভগবান শিব অত্যন্ত প্রসন্ন হন এবং আমাদের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করেন। রুদ্রাভিষেকে শিবলিঙ্গকে জল, দুধ, দই, মধু ও ঘি-এর মতো পবিত্র উপাদান দিয়ে স্নান করানো হয়। এই সময়, বিশেষ মন্ত্র উচ্চারণ করা হয় যা পরিবেশকে ভক্তিপূর্ণ করে তোলে। এই পূজার মাধ্যমে শুধু আমাদের বর্তমান জন্মের পাপই ধ্বংস হয় না, আমাদের পূর্বজন্মের পাপও ধুয়ে যায়। এছাড়াও, রুদ্রাভিষেক মানসিক শান্তি প্রদান করে, নেতিবাচকতা দূর করে এবং ঘরে ইতিবাচক শক্তি যোগায়।
তাহলে আর দেরি কিসের? আসুন জেনে নিই কিভাবে রুদ্রাভিষেক করা হয়, এর জন্য কি কি উপকরণ লাগে এবং এর উপকারিতা কি। এই নিবন্ধটি শেষ পর্যন্ত পড়ার পরে, আপনিও রুদ্রাভিষেক করতে অনুপ্রাণিত হবেন এবং আপনার জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি এবং ভগবান শিবের আশীর্বাদ পেতে সক্ষম হবেন…
বিষয়বস্তুর সারণী:-রুদ্রাভিষেক এর উপকারিতা
S.NO | প্রশ্ন |
1 | রুদ্রাভিষেক কি? |
2 | রুদ্রাভিষেক করলে কি কি উপকার পাওয়া যায়? |
3 | রুদ্রাভিষেক পূজার উপকরণ তালিকা |
4 | মন্ত্র সহকারে রুদ্রাভিষেক পূজা পদ্ধতি |
রুদ্রাভিষেক কি?
রুদ্রাভিষেক হল একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার যাতে ভগবান শিবকে বিভিন্ন পবিত্র উপকরণ দিয়ে অভিষিক্ত করা হয়। এই আচারে জল, দুধ, ঘি, দই, মধু এবং পঞ্চামৃত ব্যবহার করা হয়, যা ভগবান শিবের শিবলিঙ্গে ঢেলে দেওয়া হয়। রুদ্রাভিষেক এর উদ্দেশ্য হল শিবের আশীর্বাদ লাভ করা, পাপ নাশ করা এবং জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনা। এই আচারটি বিশেষ করে সাওয়ান মাসে, মহাশিবরাত্রি এবং অন্যান্য শুভ অনুষ্ঠানে সম্পাদিতধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, রুদ্রাভিষেক মানসিক শান্তি, শারীরিক স্বাস্থ্য এবং সম্পদ বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে এবং ভক্তদের জন্য এটি একটি শক্তিশালী সাধনা।
রুদ্রাভিষেক করলে কি কি উপকার পাওয়া যায়?
রুদ্রাভিষেকের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাদের মধ্যে তিনটি প্রধান সুবিধা নিম্নরূপ:
- মানসিক শান্তি ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি: রুদ্রাভিষেক পূজা করলে একজন ব্যক্তি সমস্ত মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি ও শান্তি পায়। যদি কোনও ব্যক্তির কুণ্ডলীতে চন্দ্র গ্রহ বিরক্ত হয় তবে তাকে মানসিক দুশ্চিন্তা ও চাপের সম্মুখীন হতে হয়। এমন অবস্থায় রুদ্রাভিষেক পূজা করলে চন্দ্র গ্রহে শান্তি আসে।
- রাশির দোষ দূর হয়: রুদ্রাভিষেক করলে কুণ্ডলীতে উপস্থিত গ্রহ দোষ দূর হয়। যেমন, কুণ্ডলীতে যদি শুক্র দোষ থাকে এবং তা সংক্রান্ত সমস্যা থাকে, তাহলে রুদ্রাভিষেক করলে সেগুলি সমাধান হয়ে যায়। একইভাবে কালসর্প যোগের প্রভাবও দূর হয় রুদ্রাভিষেক দ্বারা।
-
- বৈষয়িক সমৃদ্ধি ও ইচ্ছা পূরণ: রুদ্রাভিষেক করলে ভগবান শিব প্রসন্ন হন এবং ভক্তদের সুখ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ করেন। এটি একটি বিল্ডিং এবং যানবাহন পেতে সাহায্য করে এবং ঘরোয়া ঝামেলা দূর করে। ভগবান শিব রুদ্রাভিষেক এর মাধ্যমে আমাদের সকল ইচ্ছা পূরণ করেন
রুদ্রাভিষেক পুজন সমগ্রীর তালিকা
রুদ্রাভিষেক পূজার উপকরণ তালিকাঃ
S.NO | পূজার উপকরণ |
1 | ছাই |
2 | রুদ্রাক্ষ |
3 | ছাই |
4 | দাতুরা |
5 | শণ |
6 | খালের ফুল |
7 | ধূপ লাঠি |
8 | কর্পূর |
9 | তুলা |
10 | বাতি |
11 | পঞ্চামৃত (দুধ, দই, ঘি, চিনি, মধু) |
12 | মিষ্টি ইত্যাদি |
13 | নৈবেদ্য, ফল, কলা ইত্যাদি। |
14 | এলাচ (ছোট) |
15 | লবঙ্গ |
16 | ফুল (গোলাপ, গাঁদা, কমলা ইত্যাদি) |
17 | গণেশ জির জন্য পোশাক |
18 | ঈশ্বরের জন্য জামাকাপড় এবং অন্তর্বাস |
19 | কুমকুম |
20 | রোলি |
21 | জাফরান |
22 | বলিদানের আগুন |
23 | তেল |
24 | গঙ্গাজল (বিশুদ্ধ জল) |
25 | অক্ষত (ভাত) |
26 | গণেশ জির জন্য দূর্বা ইত্যাদি |
27 | অর্ঘ্য পাত্র এবং অন্যান্য পঞ্চপত্র |
28 | একটি গোলাকার ধাতব পাত্র |
29 | কটন উইক (গোলাকার/লম্বা) |
30 | দেশি ঘি: ১ কেজি |
রুদ্রাভিষেক পূজন বিধান মন্ত্র সহিত
রুদ্রাভিষেক পূজার সময় শিবলিঙ্গকে উত্তর দিকে রাখতে হবে, পূজা করার সময় মুখ পূর্ব দিকে রাখতে হবে । প্রথমে শৃঙ্গিতে গঙ্গাজল ঢেলে অভিষেক শুরু করুন। এর পরে, আখের রস, মধু, দই, দুধ, জল, পঞ্চামৃতের মতো বিভিন্ন তরল দিয়ে শিবলিঙ্গে অভিষেক করুন। এই সময়ে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করতে থাকুন :
ওম ত্রিম্বকম যজামহে সুগন্ধি সুস্থিবর্ধনম্।
উর্ভারুকমিভ বন্ধনান মৃত্যুর্মুখিয়া মমৃতত।
এছাড়াও, কেউ শিব তান্ডব স্তোত্র, “ওম নমঃ শিবায়” বা রুদ্র মন্ত্র জপ করতে পারেন। শিবলিঙ্গে চন্দনের পেস্ট লাগান এবং পান, পান, পান, সুপারি এবং অন্ন অর্পণ করুন। শিবলিঙ্গের কাছে ধূপ ও প্রদীপ জ্বালান এবং ভগবান শিবের মন্ত্র 108 বার জপ করুন । পূজা শেষে পরিবারের সাথে আরতি করুন। রুদ্রাভিষেক জল একটি পাত্রে সংরক্ষণ করুন এবং পুরো বাড়িতে ছিটিয়ে ব্যবহার করুন। এই জল প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করুন। এই জল শুধু বিশুদ্ধতাই আনে না, সেই সঙ্গে ঘর থেকে রোগ ও দোষ-ত্রুটি দূর করে। এই উপাসনা পদ্ধতি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক শান্তিই দেয় না বরং স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধিও বয়ে আনে।
উপসংহারঃ- রুদ্রাভিষেক এর উপকারিতা
রুদ্রাভিষেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ভগবান শিবকে খুশি করে এবং ভক্তদের ইচ্ছা পূরণ করে। এই পূজা মানসিক শান্তি, স্বাস্থ্য, সম্পদ এবং সুখ ও সমৃদ্ধি প্রদান করে। তা ছাড়া এটি পাপ ধ্বংস করে আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সাহায্য করে। সম্পর্কিত আকর্ষণীয় নিবন্ধ আপনি যদি এটি পছন্দ করেন, অনুগ্রহ করে এই নিবন্ধটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন। এছাড়াও আমাদের অন্যান্য নিবন্ধ পড়ুন এবং আমাদের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করুন.
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন :-রুদ্রাভিষেক এর উপকারিতা
প্র: রুদ্রাভিষেক কী?
উত্তর: রুদ্রাভিষেক হল একটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু পূজার আচার যাতে ভগবান শিবের রুদ্র রূপকে অভিষিক্ত করা হয়। এই পূজা বিশেষ করে ভগবান শিবের রুদ্র মূর্তিকে পবিত্র জল, দুধ, মধু, ঘি ইত্যাদি দিয়ে অভিষেক করে করা হয়। এই পদ্ধতিটি বিশেষ করে ভগবান শিবের আশীর্বাদ এবং পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য করা হয়।
প্র: রুদ্রাভিষেক করলে কী কী উপকার পাওয়া যায়?
উঃ। রুদ্রাভিষেকের অনেক উপকারিতা রয়েছে, যেমন মানসিক শান্তি, সমৃদ্ধি এবং জীবনের সমস্যার সমাধান। এই পূজা মানুষের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে কার্যকর বলে মনে করা হয়। এর সাথে এটি দোষ-ত্রুটি দূরকারী এবং পাপ ধ্বংসকারীও বটে।
প্র: রুদ্রাভিষেক পূজার উপকরণের তালিকা কী?
উত্তর: রুদ্রাভিষেকের জন্য পূজার উপকরণের মধ্যে রয়েছে শিবলিঙ্গ, পবিত্র জল, দুধ, ঘি, মধু, চাল, ফুল, পঞ্চামৃত, কুমকুম এবং প্রদীপ। এছাড়া পূজার সময় কাপড়, ফলমূল, কিছু পূজার কাপড়ও ব্যবহার করা হয়।
প্র: রুদ্রাভিষেক পূজা পদ্ধতি কি?
উত্তর: রুদ্রাভিষেক পদ্ধতিতে প্রথমে পূজার স্থানের পরিচ্ছন্নতা ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এরপর শিবলিঙ্গে পবিত্র জল, দুধ, ঘি ও মধু দিয়ে অভিষেক করা হয়। এর সাথে শিবের 108টি নামও জপ ও জপ করা হয়।
প্র: রুদ্রাভিষেকে কোন মন্ত্র পাঠ করা হয়?
উত্তর: রুদ্রাভিষেকে প্রধানত “ওম নমঃ শিবায়” মন্ত্রটি জপ করা হয়। এছাড়াও, “রুদ্রাষ্টকম” এবং “শিব তান্ডব স্তোত্র” এর মতো মন্ত্রগুলিও পাঠ করা হয় যা ভগবান শিবের প্রশংসা এবং আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্র: রুদ্রাভিষেকের জন্য কোন দিনটি উত্তম?
উত্তর: মাসের সোমবার, শিবরাত্রি এবং সংক্রান্তির মতো শুভ দিনে রুদ্রাভিষেককে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই দিনগুলিতে উপাসনা করলে বিশেষ উপকার ও আশীর্বাদ পাওয়া যায়।